আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উপায় ইসলাম আমাদেরকে সুন্দরভাবে শিক্ষা দিয়েছে। আল্লাহর কাছে ঘনিষ্ঠ হতে হলে ইমান, ইবাদত ও নেক আমল জরুরি। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় দেওয়া হলো:
১. খাঁটি তাওহীদ ও দৃঢ় ঈমান
আল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় মনে করা।
শিরক, কুফর, ও ভ্রান্ত আকীদা থেকে দূরে থাকা।
২. নামাজ প্রতিষ্ঠা করা
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো ও মনোযোগসহ আদায় করা।
নফল, তাহাজ্জুদ, দুহা ইত্যাদি নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আরও নিকটবর্তী হওয়া।
৩. কুরআন তিলাওয়াত ও বুঝে পড়া
প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করা।
আয়াতের অর্থ ও শিক্ষা অনুযায়ী জীবন সাজানো।
৪. দোয়া ও জিকিরে লিপ্ত থাকা
“সুবহানআল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার”, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ইত্যাদি বেশি বেশি বলা।
আল্লাহকে স্মরণ করলে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে।
৫. সুন্নাহ অনুসরণ করা
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করা।
তাঁর আখলাক, আমল ও জীবনযাপন নিজের জীবনে প্রতিফলিত করা।
৬. পাপ থেকে বেঁচে থাকা
গুনাহ ত্যাগ করা এবং নিয়মিত তওবা করা।
আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বিরত থাকাই নৈকট্যের বড় মাধ্যম।
৭. নফল ইবাদত ও দান-সদকা
নফল নামাজ, রোজা, কুরবানী, দান-খয়রাত করা।
হাদিসে এসেছে, বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হয় যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁকে ভালোবাসেন।
৮. মানুষের উপকার করা
অসহায়, গরিব, এতিম, মিসকিনদের সাহায্য করা।
মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করা।
৯. ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা
বিপদে ধৈর্য ধরা এবং নিয়ামতের জন্য শোকর আদায় করা।
আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নেয়ামতকে তাঁরই দান মনে করা।
👉 সংক্ষেপে, তাওহীদ, ইবাদত, জিকির, কুরআন, সুন্নাহ, নেক আমল ও গুনাহ থেকে দূরে থাকা — এই পথগুলোই আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রকৃত উপায়।
আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিষয়ে কুরআন ও হাদিস থেকে কিছু সরাসরি দলিল নিচে দেওয়া হলো—
—
📖 কুরআনের আয়াত
1. আল্লাহর স্মরণে শান্তি
> “যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে শান্তি পায়। জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।”
— [সুরা রা’দ: ২৮]
2. আল্লাহ নেককারদের সাথে আছেন
> “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।”
— [সুরা বাকারা: ১৫৩]
3. সৎকর্ম আল্লাহর নৈকট্যের মাধ্যম
> “আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, (বল) আমি তো নিকটবর্তী। আমি দোয়ারতকারীর দোয়া কবুল করি যখন সে আমাকে ডাকে।”
— [সুরা বাকারা: ১৮৬]
—
📜 হাদিস
1. নফল ইবাদতের মাধ্যমে নৈকট্য
রাসূল ﷺ বলেছেন:
> “আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ফরজ আমল দ্বারা নিকটবর্তী হয়, আর বান্দা নফল আমলের মাধ্যমে আমার কাছে আসতে থাকে, অবশেষে আমি তাকে ভালোবাসি। যখন আমি তাকে ভালোবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যদ্বারা সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যদ্বারা সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই যদ্বারা সে আঘাত করে, আর তার পা হয়ে যাই যদ্বারা সে চলে।”
— [বুখারি, হাদিস: ৬৫০২]
2. আল্লাহকে বেশি স্মরণ করার নির্দেশ
রাসূল ﷺ বলেছেন:
> “তুমি তোমার রবকে বেশি বেশি স্মরণ কর, এমনকি লোকেরা তোমাকে উন্মাদ মনে করে।”
— [মুসনাদে আহমদ, সহিহ হাদিস]
3. নেক আমল আল্লাহর কাছে প্রিয়
> “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো যে কাজ নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প হয়।”
— (বুখারী ও মুসলিম)