৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বাড়ি ভাড়া নিয়ে বিতর্ক, মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন ব্রিটিশ এমপি রুশনারা

বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের গৃহহীন বিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী।

নিজের মালিকানাধীন একটি টাউনহাউস থেকে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করে ভাড়া একলাফে ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এর জেরে তোপের মুখে মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিট তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসির।

সম্প্রতি পূর্ব লন্ডনে নিজের বাসা থেকে চার ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদসহ বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যা দেশটির ভাড়াটিয়া অধিকার সংক্রান্ত আইনবিরোধী বলে দাবি করা হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এ নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন এমপি রুশনারা আলী।

তবে রুশনারা আলীর একজন মুখপাত্র জানান, তিনি সব সময় প্রাসঙ্গিক আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছেন। পদত্যাগপত্রেও তিনি এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের ওই আসনে ২০১০ সাল থেকে টানা এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন তিনি।

দীর্ঘ রাজ‌নৈ‌তিক জীব‌নে রুশনারা আলীর বিতর্কিত হওয়ার এটিই প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার সমালোচনার মুখে পড়েন। গত বছরের অক্টোবরে গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোর অভিযোগের মুখে তিনি তার ‘বিল্ডিং সেফটি’ সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। ওই পরিবারগুলোর অভিযোগ ছিল, রুশনারা আলী এমন কিছু বিল্ডিং ম্যাটারিয়াল ফার্মের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন, যেগুলো গ্রেনফেল তদন্তে তীব্র সমালোচিত হয়েছিল। এটি তার রাজনৈতিক জীবনে একটি সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে।

এছাড়াও, তার রাজনৈতিক জীবন বরাবরই শত্রুতামূলক পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ছিল মৃত্যুর হুমকি সম্বলিত দীর্ঘদিনের স্টকিং এবং সর্বশেষ নির্বাচনে গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দানে বিরত থাকার কারণে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমে যাওয়া।

পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন

প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারকে লেখা পদত্যাগপত্রে রুশনারা আলী জানান, ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে’ তিনি পদত্যাগ করছেন। তিনি দাবি করেন, তিনি সব আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলেছেন এবং তার দায়িত্বকে গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। তবুও তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তার পদে থাকা ‘সরকারের উচ্চাভিলাষী কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেবে।’

স্টারমারের বক্তব্য

পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী স্টারমার রুশনারার ‘যত্নবান’ কাজের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান এবং বিশেষ করে ‘ভ্যাগ্রান্সি অ্যাক্ট’ বাতিল করার ক্ষেত্রে তার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

স্টারমার আরও বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন রুশনারা আলী পেছন থেকে সরকারে সমর্থন অব্যাহত রাখবেন এবং বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসনের জনগণের সেবা করে যাবেন।

পদত্যাগের ধারাবাহিকতা

সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কোনো এমপির এটিই প্রথম উচ্চ পর্যায়ের পদ থেকে পদত্যাগ নয়। এর আগে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।

তার পরে রুশনারা আলীর এ ঘটনা সরকারি পদে থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার তালিকায় আরেকটি সংযোজন।

সর্বশেষ