২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি, যে কারও ওপর হামলা হবে ‘উভয়ের ওপর আক্রমণ

দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের চুক্তির আলোচনা যে চলছে তা নয়া দিল্লি আগে থেকেই জানতো, বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

একে অপরের সঙ্গে সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব ও পাকিস্তান।

বুধবার স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে যে কোনো এক দেশের ওপর হামলাকে ‘উভয়ের ওপর আক্রমণ’ হিসেবে গণ্য করার কথাও বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডন, বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

কাতারের রাজধানীতে গত ৯ সেপ্টেম্বর হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার কয়েকদিনের মাথায় এই প্রতিরক্ষা চুক্তি হল। তেল আবিবের ওই হামলায় শীর্ষ হামাস নেতা নিহত না হলেও ৬ জন মারা যায়।

সৌদি আরবে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সফরের সময় এই ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ হল। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শাহবাজের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ চুক্তির কথা জানানো হয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি আরবের সঙ্গে হওয়া এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে এখন ‘এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন’ বিবেচনা করা হবে।

ক্রাউন প্রিন্সের আমন্ত্রণেই শরিফ সৌদি আরব সফরে গেছেন বলেও তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

দুই দেশ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ‘ওই অঞ্চল ও বিশ্বে শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

“চুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার দিকগুলোকে এগিয়ে নেওয়া এবং যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ শক্তিকে আরও মজবুত করা,” বলা হয়েছে পাকিস্তানি মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।

ইসলামাবাদে তেল সরবরাহকারী অন্যতম প্রধান দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

দুই ইসলামি দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতাও কয়েক দশকের পুরনো। ১৯৬৭ সাল থেকে ইসলামাবাদ সৌদি সামরিক বাহিনীর ৮ হাজার ২০০র বেশি সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, দুই দেশ একাধিক যৌথমহড়াও করেছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এবার যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির মধ্য দিয়ে দুই দেশের ওই সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিল।

চুক্তিটিকে ‘দীর্ঘদিনের আলোচনার’ ফসল আখ্যা দিয়ে সৌদি আরবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এটি সাম্প্রতিক কোনো সংঘাত বা দেশকে মাথায় রেখে করা নয়।

চুক্তির আওতায় পাকিস্তান সৌদি আরবকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে বাধ্য কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কূটনৈতিক ভাষায় তিনি বলেন, “এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা চুক্তি, যেখানে সামরিক সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”

ভারতের প্রতিক্রিয়া

সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির ব্যাপারে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ভারত বলেছে, দুই দেশের মধ্যে এ ধরনের চুক্তির আলোচনা যে চলছে তা নয়া দিল্লি আগে থেকেই জানতো।

“আমরা সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার খবর দেখেছি। দুই দেশের দীর্ঘদিনের যে বোঝাপড়া, তাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কথা যে ভাবা হচ্ছে, (ভারত) সরকার তা আগে থেকেই জানতো,” বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল।

নয়াদিল্লি চুক্তিটির সব কৌশলগত ও নিরাপত্তাজনিত প্রভাব খতিয়ে দেখবে জানিয়ে সব ফ্রন্টে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্তও করেছেন তিনি।

চলতি বছর কাশ্মীরকে ঘিরে চারদিনের যুদ্ধে জড়িয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। রিয়াদ-ইসলামাবাদ প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়া দিল্লির জন্য তাই নতুন মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৌদি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি হলেও রিয়াদ নয়া দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার ব্যাপারে আগ্রহী।

“ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ়। আমরা এ সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার কাজ চালিয়ে যাবো,” বলেছেন তিনি।

সর্বশেষ