দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তরাধিকারের রাজনীতির ধারা নতুন নয়। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও পরিবারের ধারাবাহিকতা রয়েছে।বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দলই পরিবারের উত্তরসূরিকে রাজনীতিতে অধিষ্ঠিত দেখতে চায়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বেশ কিছু তরুণ নেতা তৃণমূলে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। তারা দাদা কিংবা বাবার ধারাবাহিকতায় সংসদে যেতে চান। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে তাদের অনেকের ভূমিকাও ছিল। তবে নিজ যোগ্যতায়ও তারা কম নন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের পাঁচটি আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন বিএনপির ৬ বড় নেতার ৭ সন্তান।
এবারের নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামের পাঁচটি আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন- ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাঈদ আল নোমান, শাকিলা ফারজানা, ইসরাফিল খসরু, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী।
তাদের মধ্যে মীর হেলাল বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক।তিনি দলের কূটনৈতিক উইংয়েও কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে চান। এই আসন থেকে তার বাবা দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
মীর নাছির চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ছিলেন। নগর বিএনপির সভাপতিও ছিলেন তিনি। সে হিসেবে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে সাবেক এই বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রীর বেশ প্রভাব আছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বাবা মীর নাছিরের অনুসারীসহ নিজের ‘সাংগঠনিক দক্ষতায়’ নগর ও জেলার রাজনীতিতে হেলালের প্রভাব আছে।
চট্টগ্রাম নগর, দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির কমিটিতে শীর্ষ পদে আছেন হেলালের অনুসারীরা। আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হেলাল। ২০১৮ সালে এই আসনে নির্বাচন করেছিলেনতাঁর বাবা মীর নাছির। আর তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে।
চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতিতে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রভাব সব সময়ই ছিল।তিনি প্রায় ৩০ বছর সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে মানবতাবিরোধী মামলায় ফাঁসি দিয়েছে হাসিনা সরকার।এবার চট্টগ্রাম-৭ আসনে সালাহউদ্দিনের ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাশী। সালাহউদ্দিন এই আসন এবং ফটিকছড়ি থেকেও নির্বাচন করেছেন জীবদ্দশায়।
তরুণ রাজনীতিবিদ সাঈদ আল নোমান স্বল্প সময়ে রাজনীতির ময়দানে চমক দেখিয়েছেন। চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন তিনি। সাঈদের বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ছিলেন দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা। তিনি এই আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর এই আসনে বিএনপির হাল ধরেন সাঈদ।
অন্যদিকে ইসরাফিল খসরুর বাবা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা আমীর খসরু। তিনি নগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। বিএনপির গবেষণা সেলে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তার ছেলে ইস্রাফিল। বর্তমানে তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য।
আমীর খসরু জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত। তাই বাবার হয়ে মূলত ইস্রাফিল এলাকার নেতা-কর্মীদের ‘দেখভাল’ করেন। তিনি সপ্তাহে দু-তিন দিন চট্টগ্রামে অবস্থান করেন। তবে আর বাবার ছায়া হয়ে নয়; বরং নিজেই চট্টগ্রামের একটি আসনে ইস্রাফিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে আলোচনা আছে। সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম-১১ আসনে তিনি মনোনয়ন চাইবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে জয়ী হন। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দেন। এই আসনের উপনির্বাচনে আমীর খসরু জয়ী হন। একই আসন থেকে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের জুন ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন খসরু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন আমীর খসরু। সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। খসরু চট্টগ্রাম ১০ আসন থেকে ভোট করতে পারেন।
ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানার বাবা বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রয়াত উপদেষ্টা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম।যিনি এক সময় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে ছিলেন। তিনি হাটহাজারী আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তার বাবাও এই আসন থেকে চার বার এমপি হয়েছিলেন।
আর জহিরুল ও মিশকাতুলের বাবা চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।চট্টগ্রাম-১৫ আসনে জাফরুল এমপি ছিলেন। এবার এই আসন থেকে তার দুই ছেলে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।