২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

‘আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা দিয়েছি, আবার জামায়াতে যোগ দেবো’

বহুল আলোচিত আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী। জানিয়েছেন, আবার জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেওয়ার কথা।

তার ভাষায়, ‘আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা দিয়েছি, আমি আবার জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করব। এখন কেবল লিখিত আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে’।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবি পার্টি থেকে পদত্যাগ করার কারণ ব্যাখ্যা করেন তিনি।

সোলায়মান চৌধুরী বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার- এই তিনটি মূলনীতির ভিত্তিতে ও সাত দফা কর্মসূচি সামনে রেখে এবি পার্টি আত্মপ্রকাশ করে ২০২০ সালের ২ মে। সে সময় দেশের প্রায় ৫৩টি জেলায় ও ৩০০টি উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়। দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি এবং দল হিসেবে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য যে শর্ত থাকে তা পূরণ করতে সবই করা হয়। কিন্তু তৎকালীন সরকারের নানা চাপে নতজানু নির্বাচন কমিশন এবি পার্টিকে নিবন্ধন দেয়নি। নিবন্ধন না দিলেও আমাদের কার্যক্রম থেমে থাকেনি।

তার ভাষ্যে, ‘জুলুমবাজ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, লুটপাট, মানুষের অধিকার হরণে জড়িত আওয়ামী লীগ সরকারের চাপের কারণে নিবন্ধন দেয়নি নির্বাচন কমিশন। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী পটপরিবর্তনের পর আমরা নিবন্ধন পাই। নির্বাচন কমিশন আমার নামে নিবন্ধন সার্টিফিকেট ও প্রতীক বরাদ্দ করে। এরপর দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। একটি নতুন কমিটি আত্মপ্রকাশ করে’। 

সাবেক এই সচিব বলেন, সেই কমিটি দেশব্যাপী সংগঠনকে বিস্তার করা, সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো, সব জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটি করা, জনসাধারণকে এই দলে সম্পৃক্ত করা, মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানুষের অধিকার কোথায় খর্ব, হরণ হচ্ছে তা মানুষের কাছ থেকে জানা এবং মানুষের অধিকার মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ার যে মহান ব্রত নিয়ে আমরা এবি পার্টি গঠন করেছিলাম তার আর কিছুই হচ্ছে না

‘এবি পার্টি একটি ঢাকা-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে’ অভিযোগ তুলে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দেশের কোথাও দলের জনসম্পৃক্ততা নেই, বরং দিন দিন এবি পার্টির বিভিন্ন জেলার নেতারা পদত্যাগ করে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অর্থাৎ, এবি পার্টি মানুষের সেবা করবে, মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করবে, সমস্যার সমাধান করবে—সেখান থেকে এবি পার্টি অনেক দূরে সরে গেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাকে নামকা-ওয়াস্তে দলের উপদেষ্টা রাখা হয়েছে। বাস্তবে উপদেশ চাইলে উপদেশ দেওয়া যায়, না চাইলে তো আর উপদেশ দেওয়া যায় না। অতএব আমি মনস্থির করেছি, এই পার্টি যে অঙ্গীকার করে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আমার মাধ্যমে, তার ছিটেফোঁটাও এখন দলের মধ্যে নেই। এখন তারা অন্য কাজে ব্যস্ত। এমন দলে থাকার চাইতে না থাকাই শ্রেয় বলে মনে করে এবি পার্টির সকল পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। এ মর্মে এবি পার্টির চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।

পুরোনো দল জামায়াতে ফেরা নিয়ে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, আমি নতুন কোনো দলে নয়, আমার পুরাতন রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীতে আমি ফিরে যাব। এরই মধ্যে আমার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। তিনি প্রাথমিকভাবে স্বাগতম জানিয়েছেন। আমি ওনার সামনে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ঘোষণা দিয়েছি, আমি আবার জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করব। এখন কেবল লিখিত আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। 

তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামের মাধ্যমে আমরা যাতে সম্মিলিতভাবে এই দেশের সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধান, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া ও এ দেশকে সুন্দর দেশে পরিণত করতে পারি। 

এর আগে, এবি পার্টি থেকে পদত্যাগ করেই জামায়াতে ইসলামীর আমিরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে বসুন্ধরার বাসায় যান বলেও জানান সোলায়মান চৌধুরী।

সর্বশেষ